a story lurks in every corner...

বাঙালি ও পড়াশোনা

দুর্গাপূজো চলে এলো। দু মাস ধরে কাউন্টডাউন চলছে। সকালে এফএম খুললেই শোনা যায় আর কটা দিন বাকি মায়ের আসার। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ সব কিছুতেই কাউন্টডাউন। আর ফাইনালি এক সপ্তাহ। আগামী শনিবার মহালয়া।

কলকাতায় এসেছি ন বছর হয়ে গেল কিন্তু মহালয়ার ভোরে গঙ্গার ঘাটে একবারও যাওয়া হয়ে ওঠেনি আমার। প্রত্যেক বছর কোনো-না-কোনো-ভাবে আমি আটকে পড়েছি। হয় পারিবারিক কারণে শহরের বাইরে থেকেছে, না হলে হসপিটাল ডিউটির জন্য আটকে থেকেছি। 

এই বছর আপাতত কোন বাধ্যবাধকতা নেই বলেই মনে হচ্ছে। তাই ভাবলাম এবার মহালয়ার ভোরে গঙ্গা ঘাটে যেতেই হবে। এই ভেবে রাতে শোয়ার আগে স্নান সারবো বলে বাথরুমে ঢুকছি কি মোবাইল ফোন-টা বেজে উঠলো। দেখলাম অনিন্দ্য ফোন করছে।

কথায়-কথায় জানলাম কাকিমা কে নিয়ে একটু বাজার করতে বেরিয়েছিল। ফিরতে দেরি হয়েছে।না হলে রবিবারের আড্ডা টা আরো আগেই শুরু হয়ে যেত আমাদের। আমি জিজ্ঞেস করলাম মহালয়ার প্ল্যানিং কি। বলল সেরকম কিছু না।তখন আমি সাজেস্ট করলাম দক্ষিণেশ্বরের ঘাটে ভোরবেলা যাওয়ার কথা আর তাতে সে রাজি হয়ে গেল। 

কাকিমার কথা উঠতে আমি প্রশ্ন করলাম about her পাবলিকেশন। কাকিমা একজন লেখিকা। উনার বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার বেশ ভালো লেগেছিল।

A: লাইফটা না ভীষণ happening কিন্তু আসলে আমরা ওই happenings গুলোকে ধরতে পারি না। সবকিছুই লাইফে আছে but একটু দূরে-দূরে। হাত বাড়ালেই ধরে ফেলা যায় কিন্তু আমরা ওই হাত বাড়ানোর সাহস করে উঠতে পারি না, কুঁড়েমি করি আবার অনেক সময় ভাবি যে হয়তো হাত বাড়িয়ে ধরতে পারবো না। 
আমার মায়েরও হয়েছে ওই একই দশা।



গত বছর যখন কাকু মারা গেছেন আমি শ্রাদ্ধ ের দিন দেখা করতে গেছিলাম । কথা প্রসঙ্গ কাকিমার কাছ থেকে উনার একটা বই নিয়ে আসি। 
কবিতাগুলোতে প্রাণ আছে। হয়তো কোথাও অনেক কিছু না পাওয়ার ব্যথা, আবার কোথাও একাকীত্ব, আবার কোথাও জীবনকে নতুন করে পাওয়ার আশা। ভীষণ ভাল লেগেছিল।

যখন পরবর্তীকালে আমি লেখালেখি শুরু করি অনিন্দ্য কে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'হ্যাঁরে কাকিমা যে বইটা ছাপিয়েছেন, কিছু টাকা-পয়সা পেলেন?'

A: ধুর, মায়ের কথা বাদ দাও। লেখাই শার। কোন কিছুর খোঁজ-খবর রাখে না। মা জানেওনা কটা বই বিক্রি হয়েছে। সে তার নিজের মনে লিখে চলেছে। আর বাবা চলে যাওয়ার পর হঠাৎ করে জীবনে এত বড় একটা ঝড় আমার মাথার আছড়ে পড়ে যে আমার আর ওই দিকে নজর দেয়ার মতন এনার্জি  ছিলোনা। মায়ের যা খুশি তাই করুক। যদি লেখালেখি নিয়ে ভালো থাকে তাহলে তাই থাক। আমিও আটকাই না।

PK: কিন্তু শুনেছি তো আজকাল লেখালেখি তে ভালোই রোজগার আছে যদি বই বিক্রি হয় ভালো। কাকিমার লেখায় তো প্রাণ আছে রে। একটু যদি ভাল একটা প্লাটফর্ম পেতো আমার মনে হয় অনেক এগিয়ে যেতে পারতো।

A: আসলে কি জানো তো মায়ের গ্রাজুয়েশন টা করা হয়নি। তখনকার সময় ভালো ছেলে দেখে বাবা-মা ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দেয়। শ্বশুরবাড়িতে এসে সংসারের চাপ। পড়া আর কমপ্লিট করে উঠতে পারেনি। সেই দুঃখ মায়ের মনে আজও আছে। 
গত বছর বাবা চলে যাওয়ার পর মা যখন লেখার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে নেয় আমি তখন মাকে বললাম, গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করো। তুমিতো বাংলা সাহিত্য নিয়ে চর্চা করছ, তাহলে বাংলাতেই না হয় গ্রাজুয়েশন টা করো। তোমার মনের ইচ্ছেটাও পূরণ হবে আর সাথে সাথে তোমার কনফিডেন্স টাও বাড়বে। 

আমি এমবিএ করছি। তুমিও না হয় আমার সাথেই ভর্তি হয়ে যাও। শনিবার ও রবিবার, মা-ছেলে মিলে দুজনই বইয়ের জগতে হারিয়ে যাব। দেখবে খারাপ লাগবে না। 

PK: কাকিমা রাজি হলো?

A: প্রথমে দোনামোনা করছিল তবে অবশেষে রাজি করিয়েছি। পুজো যাক আমি মায়ের ভর্তির ব্যবস্থা করব। আসলে কি জানো তো মা এর মধ্যে অনেক গুণ রয়েছে কিন্তু সংসারের চাপে সে গুলোকে কোনদিনই সে নিজের মতন করে explore  করতে পারেনি। আমি চাই মাকে সেই সুযোগটা করে দিতে। এখন অসুবিধা তো কিছু নেই। আমি অফিস চলে গেলে সারাদিন মা ঘরে ফাঁকাই থাকে। এমনি সাহিত্যচর্চা ভীষণ ভালবাসে। আমি চাই এবার এই পথেই আরো এগিয়ে যাক অনেকটা পথ।

PK: অবশ্যই পারবে রে। কাকিমা has ডিটারমিনেশন।

আসলে বাঙ্গালী দের পড়ার খিদে টা হয়তো কোনদিনই মেটে না। এটা আমাদের রক্তে আছে।

No comments:

Post a Comment